ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কথায় আছে, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। সেই ভাবনায় ভর করেই উপকূলের নোনা জমিতে হারিয়ে যাওয়া ধানের ফলন ফিরিয়ে আনতে চাইছে কৃষি দপ্তর। আমফান, ফণী, যশের মতো ঘূর্ণিঝড়ের পর সুন্দরবন, গোসাবা, ক্যানিং-সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের জমি নষ্ট করেছে নোনা জল। বারবার এমন ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব ছিল, নোনা জমিতে চাষযোগ্য ধানের উপর জোর দেওয়া হোক। তখনই নোনাস্বর্ণ ধানের নাম সামনে আসে। শুরু হয় পরীক্ষা। দেখা যায় সফলই শুধু না, এই ধান মিষ্টি জলের জমিতে তৈরি হওয়া ধানের মতোই সমান পুষ্টিগুণসম্পন্ন। কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। সেই পর্বেই সামনে আসে আরও কিছু তথ্য। বহুকাল আগে চাষ করা হত এমন অন্তত ১০ রকমের ধানকে একইসঙ্গে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নোনা দুধেশ্বর, আমনমোনা, ক্যানিং সেভেন, উড়ির মতো অত্যন্ত লবণ সহনশীল ধান সেই তালিকায় রয়েছে। এক সময় এই প্রজাতির ধান সুন্দরবন অঞ্চলে চাষ হত। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ফের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ করে আপামর জনগণের পাতে তুলে দেওয়া যায় কিনা, তা দেখা হচ্ছে। একাধিক সংস্থার সহযোগিতায় কৃষিবিজ্ঞানীরা এই গবেষণা চালাচ্ছেন। যেমন গোসাবায় সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের গবেষণাগারে বছর দেড়েক ধরে এই পরীক্ষা চালাচ্ছে সেভিয়ারস অ্যান্ড ফ্রেন্ড অফ এনভায়রনমেন্ট (সেফ)। নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে এমন মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাকে ফের পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ চালাচ্ছে সংস্থাটি। গবেষণাগারে না গিয়ে জমিতে দাঁড়িয়ে হচ্ছে কম সময়ে দ্রুত এবং বেশি পরিমাণ মাটি পরীক্ষার কাজ। একইসঙ্গে চলছে ধান নিয়ে পরীক্ষা। সংস্থার সম্পাদক তথা প্রকল্প অধিকর্তা সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে জমির চরিত্র বোঝার চেষ্টা হয়। জমি যদি পুনরায় উর্বর করে তুলতে হয় তাতে অরগ্যানিক কার্বন ও জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাতেই স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরবে জমি। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ জমির ক্ষেত্রে পিপিটি (জমির উর্বরতার একক) .২ পর্যন্ত হয়। জমি লবণাক্ত হয়ে গেলে তার পরিমাণ হয়ে যায় .৭ বা .৮-এর মতো।নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে এমন মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাকে ফের পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ চালাচ্ছে সংস্থাটি। গবেষণাগারে না গিয়ে জমিতে দাঁড়িয়ে হচ্ছে কম সময়ে দ্রুত এবং বেশি পরিমাণ মাটি পরীক্ষার কাজ। একইসঙ্গে চলছে ধান নিয়ে পরীক্ষা। সংস্থার সম্পাদক তথা প্রকল্প অধিকর্তা সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে জমির চরিত্র বোঝার চেষ্টা হয়। জমি যদি পুনরায় উর্বর করে তুলতে হয় তাতে অরগ্যানিক কার্বন ও জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাতেই স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরবে জমি। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ জমির ক্ষেত্রে পিপিটি (জমির উর্বরতার একক) .২ পর্যন্ত হয়। জমি লবণাক্ত হয়ে গেলে তার পরিমাণ হয়ে যায় .৭ বা .৮-এর মতো। সুন্দরবনের জমি এই ধরনের। সেক্ষেত্রে চাষি কী চাইছেন তার উপর জোর দেওয়া হয়। দরকারে পিএইচের মাত্রাও স্থিতিশীল করা হয়। তাঁর কথায়, “একজন কৃষক যদি চান পুরনো জমি ফিরে পেতে, কীভাবে তা সম্ভব সেটা তাঁদের বলে দেওয়া হয়। লবণাক্ত জমির ফসল ফলাতে চাইলে তারও উপায় বলে দেওয়া হয়। সঙ্গে সেই প্রজাতির শস্যের বীজও দেওয়া হয়।” বাজারে যে ধানের চাল মেলে তার বেশিরভাগই উচ্চ ফলনশীল। নতুন প্রক্রিয়ায় পুরনো ধান ফের উৎপাদনের পরীক্ষা সফল হলে তার মাধ্যমে দেশীয় কৃষির দিকে ঝোঁকার সুযোগও তৈরি হবে বলে জানা যাচ্ছে। এমন পরীক্ষা সফল হলে তা রীতিমতো চমক বলে মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, “যে ধান নিয়েই পরীক্ষা হোক না কেন, তাকে নোনা জমিতে চাষের জন্য অনেক বেশি লবণ সহনশীল হতে হবে। নোনাস্বর্ণ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে বিজ্ঞানীরা যদি আরও কিছু নতুন ধান তুলে আনতে পারেন সে তো ভালই।” এ প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, চাষিদের প্রবণতার কথাও। বলছেন, “যে ধান চাষ করলে লাভ হয়, এমন ধানকেই কিন্তু চাষিরা গ্রহণ করেন।” উদাহরণ দিয়েছেন পুরুলিয়ার লাল চালের। মন্ত্রীর কথায়, “এই চালের পুষ্টিগুণ অত্যন্ত বেশি। কিন্তু এই ধান সেখানকার চাষিরা বিক্রি করেন না। কারণ এর কোনও বাজার চাহিদা নেই। তাই স্থানীয়ভাবে চাষ করে নিজেরাই সে চালের ভাত খান।
Date: 01-Jun-2022